রঙিন স্বপ্ন
রোমান্টিক অণুগল্প
© তারিক ওয়ালি
- সময়মত প্রধানমন্ত্রী পৌঁছুলেন সভাস্থলে। তারপর তিনি মুর্হূমুহ হাততালি আর শ্লোগান উপেক্ষা করে মঞ্চে উঠলেন। মঞ্চে উঠে দু সেকেন্ডর জন্য চোখ বন্ধ করলেন। কিছু একটা ভাবলেন বোধ হয়। দর্শক আর দলীয় নেতা-কর্মীরা তীব্র আবেগ আর উচ্ছ্বাস নিয়ে তাকিয়ে রইলো প্রধানমন্ত্রীর দিকে। প্রধানমন্ত্রী ভয়ানক এক হুংকার ছেড়ে বললেন, সংগ্রামী সাথি ও বন্ধুগণ! মুর্হূতেই সভাস্থল জুড়ে নেমে এলো পিনপতন নিরবতা। সেই জাদুকরী সম্মোধনে দর্শক চোখের পাতা ফেলতেও ভুলে গেলো। তারপর প্রধানমন্ত্রী বেশ ক্লান্তি নিয়ে বললেন, ওরে তোরা কে কোথায় আছিস, আমাকে বিছনা পেতে দে, আমি একটু ঘুমোবো। বেশ কদিন ঘুমুতে পারিনি।
- ধুর! এইটা কোন গল্প হলো, তুমি সবসময় এমন ফাজলামি করো। আচ্ছা, তুমি এমন কেন?
- একটু হেসে জুয়েল বললো, কই? আমি কেমন?
- এই যে কোনো কিছুই সিরিয়াসলি নাও না। আমি বললাম একটা গল্প বলতে আর তুমি কী আজগুবি কাহিনী শুরু করছো।
- ও...
- ও.. মানে?
জুয়েল মাঝে মাঝেই ঝুমুরকে রাগাতে এরকম ও... ও... করে। ও... শব্দটা শুনতে ঝুমুর একটুও পছন্দ করে না। রেগে যায় ও। কেউ রেগে গেলে সবাই তাকে আরো বেশি করে রাগায়। রাগাতে মজা পায়। অন্যকে রাগানোর মজা বড় মজা। ঝুমুরের কোলে শুয়ে জুয়েল আরেকটা গল্প ভাবতে থাকে। এবার একটা ভালো গল্প বলতে চায় ও। জানে রাগ আরো বেড়ে গেলে সর্বশক্তি দিয়ে মাথার চুল ধরে টান দিবে সেই সাথে চুলে বিলি কাটাও বন্ধ হয়ে যাবে। ঝুমুরকে রাগিয়ে এরকম রোমান্টিক মুর্হূতটা নষ্ট না করাই উচিত।
- আচ্ছা, দাঁড়াও তোমাকে আরেকটা ভালো গল্প শোনাচ্ছি।
- আমি দাঁড়াতে পারবো না, কিঞ্চিত রাগত স্বরে বললো ঝুমুর।
- ঠিকাছে, দাঁড়াতে হবে না। জানো, তোমার রাগি চেহারাটা আমার দেখতে খুব ভালো লাগে। জানো, তুমি আমার বউ না হলে আমার কি লস হতো?
- হয়েছে। আর আদিখ্যতা দেখাতে হবে না। ভালো একটা গল্প শোনাও। চুলের বিলি কাটতে কাটতে বললো ঝুমুর।
- ওক্কে... তোমাকে আরেকটা সুন্দর গল্প শোনাচ্ছি। এই বলে চোখ বন্ধ করে জুয়েল।
ওদের সংসার জিবন ৬ মাসের। জুয়েল পছন্দ করতো ঝুমুরকে। ঝুমুরও। কিন্তু সেটা কখনোই বাড়াবাড়ি পর্যায়ের হয়নি। ঠিক প্রেমও বলা চলে না। বিয়ের আগে একবার দেখা হয়েছিলো ওদের। পছন্দ হওয়াতে বাবা মাকে রাজি করিয়েছে ওরা। দুজনেই পড়ালেখা করে। ঝুমুর বেসরকারি একটা ভার্সিটিতে বিএসসি করছে। জুয়েল বিএসসি কমপ্লিট করার পর এমএসসি করছে। পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসা রয়েছে ওর। ব্যবসার টাকায় দিব্যি দিন চলে যায় ওদের। বাবা পেনশনের টাকায় বাড়ি করেছেন। মা-বাবা, বড় ভাই-ভাবির সাথে যৌথ সংসার । মাস শেষে বাবাকে ৪০০০ টাকা দেয়। বাকি যে হাতখরচার টাকা সেটা ব্যবসা থেকেই হয়ে যায়। বাবা বাজার করেন। নামাজ পড়েন। বেশ সুখের সংসার।
জুয়েল ঝুমুরকে বেসম্ভব ভালোবাসে। বিশেষ করে দু-একটি গুণ তার ভালোবাসাকে বাড়িয়ে তুলেছে শতগুণ। বাড়তি চাহিদা নাই মেয়েটার। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের চাহিদা থাকে বেশি। একটা পূরণ হলে আরো দশটা চাহিদা সৃষ্টি হয়। কিন্তু জুয়েল যা দেয় তাতেই ও খুশি। কখনোই বাড়তি বা বড় কোনো আবদার করেনি। ভাবির ঘরের আসবাবপত্র দেখে কখনো বলেনি, ওদের আছে আমাদেরও কিনতে হবে। জুয়েলই ইচ্ছা করে কিছু না চাইতেই ওকে কিনে দেয়। ঝুমুরের চোখ দেখলেই বুঝতে পারে ওর কি প্রয়োজন। ঝুমুরও বুঝে ফেলে সব। মনের ভাষা বুঝা বড় কঠিন। কিন্তু এই কঠিন ব্যাপারটা ওরা খুব সহজেই আয়ত্ব করে ফেলেছে কিংবা ওটা ওদের এক্সট্রা গুণ। মাঝে মাঝে জুয়েল ভাবে, ভারি অদ্ভুত মেয়েতো! ঝুমুরের কোলে শুয়ে চোখ বন্ধ করে তাই ভাবছিলো ও।
ঝুমুর বিরক্ত হয়ে বললো, এই কি ভাবছো, গল্প বলবা না?
- ওহ... ভুলেই গেছিলাম। কি গল্প বলবো?
- তুমিই তো বললা সুন্দর একটা গল্প।
© তারিক ওয়ালি
- সময়মত প্রধানমন্ত্রী পৌঁছুলেন সভাস্থলে। তারপর তিনি মুর্হূমুহ হাততালি আর শ্লোগান উপেক্ষা করে মঞ্চে উঠলেন। মঞ্চে উঠে দু সেকেন্ডর জন্য চোখ বন্ধ করলেন। কিছু একটা ভাবলেন বোধ হয়। দর্শক আর দলীয় নেতা-কর্মীরা তীব্র আবেগ আর উচ্ছ্বাস নিয়ে তাকিয়ে রইলো প্রধানমন্ত্রীর দিকে। প্রধানমন্ত্রী ভয়ানক এক হুংকার ছেড়ে বললেন, সংগ্রামী সাথি ও বন্ধুগণ! মুর্হূতেই সভাস্থল জুড়ে নেমে এলো পিনপতন নিরবতা। সেই জাদুকরী সম্মোধনে দর্শক চোখের পাতা ফেলতেও ভুলে গেলো। তারপর প্রধানমন্ত্রী বেশ ক্লান্তি নিয়ে বললেন, ওরে তোরা কে কোথায় আছিস, আমাকে বিছনা পেতে দে, আমি একটু ঘুমোবো। বেশ কদিন ঘুমুতে পারিনি।
- ধুর! এইটা কোন গল্প হলো, তুমি সবসময় এমন ফাজলামি করো। আচ্ছা, তুমি এমন কেন?
- একটু হেসে জুয়েল বললো, কই? আমি কেমন?
- এই যে কোনো কিছুই সিরিয়াসলি নাও না। আমি বললাম একটা গল্প বলতে আর তুমি কী আজগুবি কাহিনী শুরু করছো।
- ও...
- ও.. মানে?
জুয়েল মাঝে মাঝেই ঝুমুরকে রাগাতে এরকম ও... ও... করে। ও... শব্দটা শুনতে ঝুমুর একটুও পছন্দ করে না। রেগে যায় ও। কেউ রেগে গেলে সবাই তাকে আরো বেশি করে রাগায়। রাগাতে মজা পায়। অন্যকে রাগানোর মজা বড় মজা। ঝুমুরের কোলে শুয়ে জুয়েল আরেকটা গল্প ভাবতে থাকে। এবার একটা ভালো গল্প বলতে চায় ও। জানে রাগ আরো বেড়ে গেলে সর্বশক্তি দিয়ে মাথার চুল ধরে টান দিবে সেই সাথে চুলে বিলি কাটাও বন্ধ হয়ে যাবে। ঝুমুরকে রাগিয়ে এরকম রোমান্টিক মুর্হূতটা নষ্ট না করাই উচিত।
- আচ্ছা, দাঁড়াও তোমাকে আরেকটা ভালো গল্প শোনাচ্ছি।
- আমি দাঁড়াতে পারবো না, কিঞ্চিত রাগত স্বরে বললো ঝুমুর।
- ঠিকাছে, দাঁড়াতে হবে না। জানো, তোমার রাগি চেহারাটা আমার দেখতে খুব ভালো লাগে। জানো, তুমি আমার বউ না হলে আমার কি লস হতো?
- হয়েছে। আর আদিখ্যতা দেখাতে হবে না। ভালো একটা গল্প শোনাও। চুলের বিলি কাটতে কাটতে বললো ঝুমুর।
- ওক্কে... তোমাকে আরেকটা সুন্দর গল্প শোনাচ্ছি। এই বলে চোখ বন্ধ করে জুয়েল।
ওদের সংসার জিবন ৬ মাসের। জুয়েল পছন্দ করতো ঝুমুরকে। ঝুমুরও। কিন্তু সেটা কখনোই বাড়াবাড়ি পর্যায়ের হয়নি। ঠিক প্রেমও বলা চলে না। বিয়ের আগে একবার দেখা হয়েছিলো ওদের। পছন্দ হওয়াতে বাবা মাকে রাজি করিয়েছে ওরা। দুজনেই পড়ালেখা করে। ঝুমুর বেসরকারি একটা ভার্সিটিতে বিএসসি করছে। জুয়েল বিএসসি কমপ্লিট করার পর এমএসসি করছে। পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসা রয়েছে ওর। ব্যবসার টাকায় দিব্যি দিন চলে যায় ওদের। বাবা পেনশনের টাকায় বাড়ি করেছেন। মা-বাবা, বড় ভাই-ভাবির সাথে যৌথ সংসার । মাস শেষে বাবাকে ৪০০০ টাকা দেয়। বাকি যে হাতখরচার টাকা সেটা ব্যবসা থেকেই হয়ে যায়। বাবা বাজার করেন। নামাজ পড়েন। বেশ সুখের সংসার।
জুয়েল ঝুমুরকে বেসম্ভব ভালোবাসে। বিশেষ করে দু-একটি গুণ তার ভালোবাসাকে বাড়িয়ে তুলেছে শতগুণ। বাড়তি চাহিদা নাই মেয়েটার। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের চাহিদা থাকে বেশি। একটা পূরণ হলে আরো দশটা চাহিদা সৃষ্টি হয়। কিন্তু জুয়েল যা দেয় তাতেই ও খুশি। কখনোই বাড়তি বা বড় কোনো আবদার করেনি। ভাবির ঘরের আসবাবপত্র দেখে কখনো বলেনি, ওদের আছে আমাদেরও কিনতে হবে। জুয়েলই ইচ্ছা করে কিছু না চাইতেই ওকে কিনে দেয়। ঝুমুরের চোখ দেখলেই বুঝতে পারে ওর কি প্রয়োজন। ঝুমুরও বুঝে ফেলে সব। মনের ভাষা বুঝা বড় কঠিন। কিন্তু এই কঠিন ব্যাপারটা ওরা খুব সহজেই আয়ত্ব করে ফেলেছে কিংবা ওটা ওদের এক্সট্রা গুণ। মাঝে মাঝে জুয়েল ভাবে, ভারি অদ্ভুত মেয়েতো! ঝুমুরের কোলে শুয়ে চোখ বন্ধ করে তাই ভাবছিলো ও।
ঝুমুর বিরক্ত হয়ে বললো, এই কি ভাবছো, গল্প বলবা না?
- ওহ... ভুলেই গেছিলাম। কি গল্প বলবো?
- তুমিই তো বললা সুন্দর একটা গল্প।
Comments
Post a Comment